ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশ থেকে নথি না আসাতেই জামিন পিকে হালদারের?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম

বাংলাদেশ থেকে পলাতক পিকে হালদার জামিন পাওয়ার মূল কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে বাংলাদেশের আদালত যে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে, সেই নথি ভারতের আদালতে জমা করা যায়নি।

 

কলকাতার বিশেষ আদালতের বিচারক প্রশান্ত মুখার্জি তার রায়ে সেটা উল্লেখও করেছেন।

 

এই জামিন তিনি মঞ্জুর করেছেন গত শুক্রবার, আর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন মি. হালদার ও একই মামলায় গ্রেফতার তার আরও দুই সঙ্গী।

 

প্রত্যেক অভিযুক্তকে ১০ লক্ষ ভারতীয় টাকা মূল্যের বণ্ড জমা দেওয়া, ভারত ছেড়ে বাইরে যেতে না পারার মতো একাধিক শর্ত দেয়া হয়েছে।

 

ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট মি. হালদার ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল, এবার তার বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে আইনজীবীরা জানাচ্ছেন।

 

আগামী নয়ই জানুয়ারি থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং সেদিন আদালতে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে পিকে হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের।

 

বাংলাদেশের আদালতের নথি নেই
এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন যে ঢাকার বিশেষ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম গত বছর এক রায় দিয়ে পিকে হালদারকে ১০ হাজার কোটি টাকার অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ২২ বছর জেলের সাজা দিয়েছেন।

 

এই তথ্য তারা জেনেছেন সাধারণভাবে উপলব্ধ সূত্র থেকে। বাংলাদেশের আদালতের নথি যাতে ভারতে আনা যায়, সেজন্য দুই দেশের মধ্যে থাকা আইনি পরিষেবা সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী ইডি বাংলাদেশের সরকারের কাছে আবেদনও করেছিল।

তবে কলকাতার আদালতকে ইডি জানিয়েছে "বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থায়" সেই নথি তারা সংগ্রহ করতে পারেনি। আদালতকে তারা বলেছিল যে বাংলাদেশে সাজা প্রাপ্ত একজন আসামি ভারতের আদালত থেকে জামিন পেতে পারেন না। তারা আবেদন করেছিল যাতে সাধারণভাবে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তার ওপরে ভিত্তি করেই যেন জামিন না-মঞ্জুর করা হয়।

পিকে হালদারের আইনজীবী মিলন মুখার্জির যুক্তি ছিল যে সাধারণভাবে পাওয়া গেছে এমন তথ্য আদালত-গ্রাহ্য হতে পারে না। তাই, তার যুক্তিতে মি. হালদার ভারতে প্রথমবার কোনও অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন।

আদালত ইডির যুক্তি মানেনি এক্ষেত্রে।

বিচারপতি তার রায়ে বলেছেন যে বাংলাদেশে কোনও মামলা চলছে বা সাজা হয়েছে, এরকম "আইনগ্রাহ্য" কোনও নথি আদালতের সামনে পেশ করা হয়নি।

"যে কোনও দেশের নাগরিকেরই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয়। সেদেশে (বাংলাদেশে) রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা চলছে বলে নথি পাওয়া যাচ্ছে না, এই যুক্তি দেখিয়ে" ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না।

আবার সাধারণভাবে উপলব্ধ কোনও তথ্যের ওপরে ভিত্তি করে যে আদালত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, সেটাও লিখেছেন বিচারক।

আর যেসব কারণে জামিন
পূর্বতন ফৌজদারী বিচার-বিধির বদলে ভারতে সম্প্রতি যে নতুন ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) চালু হয়েছে, তা অনুযায়ীই জামিনের আবেদন করেছিলেন পিকে হালদারের আইনজীবীরা।

বিএনএসএস অনুযায়ী ভারতে প্রথমবার কোনও অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন, এমন ব্যক্তি যদি সেই অপরাধের সর্বোচ্চ যে সাজা হতে পারে, তার এক-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যেই কারাগারে কাটিয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য

পিকে হালদারের আইনজীবী মিলন মুখার্জির যুক্তি ছিল, যেহেতু আদালত-গ্রাহ্য কোনও নথি পাওয়া যায়নি যে মি. হালদার বাংলাদেশে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাই ভারতে তিনি প্রথমবার অভিযুক্ত হয়েছেন।

সেক্ষেত্রে বিএনএসএস অনুযায়ী তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য, এমন যুক্তিই দেওয়া হয় তার পক্ষ থেকে।

আদালত সেই যুক্তি মেনে নিয়ে লিখেছে, "যেহেতু প্রথম অপরাধ বা সাজা হওয়ার রায়ের ব্যাপারে কোনও গ্রহণযোগ্য নথি বা তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই আবেদনকারী নিশ্চিতভাবেই 'বেনেফিট অফ ডাউট' (সন্দেহবশত ছাড়ের সুবিধা) পাবেন। অতএব আবেদনকারীরা জামিন পাওয়ার যোগ্য।"

এই বিষয়টি ছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ, তবে বিচারপতির ভাষায় 'জটিল' যুক্তি উঠে এসেছিল আদালতে।

ভারতে অর্থ পাচার এবং দুর্নীতিরোধে যে আইন আছে, সেগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের একই অপরাধের আইনগুলির মিল আছে, কি না।

পিকে হালদারের আইনজীবী মিলন মুখার্জির যুক্তি ছিল বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত সরকারি অথবা বেসরকারি ব্যক্তি হতে পারেন। কিন্তু ভারতের দুর্নীতি দমন আইন শুধুমাত্র সরকারি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

দুই দেশের আইন দুটি সমান নয়, এই যুক্তি দিয়ে মি. হালদারের আইনজীবীরা বলেছিলেন যে ভারতের দুর্নীতি দমন আইন তো পিকে হালদারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যই হতে পারে না।

ইডি নানা পাল্টা যুক্তি দিয়েছিল তবে বিচারপতি এই 'জটিল' বিষয়টির মধ্যে ঢুকতেই চাননি, কারণ জামিনের আবেদন করা হয়েছিল বিএনএসএসের ৪৭৯ ধারা অনুযায়ী।

ভারত ছাড়তে পারবেন না
পিকে হালদার এবং তার দুই সঙ্গীদের প্রত্যেককে দশ লক্ষ ভারতীয় টাকা মূল্যের বণ্ড ছাড়াও জামিনের ছয়টি শর্ত দেওয়া হয়েছে।

প্রথম শর্ত হলো আদালত মামলার বিচারের জন্য যে যে দিন নির্ধারণ করবে, তার প্রতিটিতে হাজির থাকতে হবে।

দ্বিতীয়ত, জামিনে থাকাকালীন অন্য কোনও অপরাধ করতে পারবেন না।

তৃতীয় শর্ত- মামলাটির কোনও প্রমাণ নষ্ট করতে পারবেন না।

চতুর্থ শর্ত হলো, সাক্ষীদের কোনওরকম হুমকি দেওয়া বা আদালতের সামনে সত্য না বলার জন্য চাপ দিতে পারবেন না।

পঞ্চম শর্ত হলো আদালতের কাছে ফোন নম্বর, ইমেইল এবং বাসস্থানের প্রামাণ্য নথি দিতে হবে এবং পাসপোর্ট যদি ইতোমধ্যেই বাজেয়াপ্ত না করা হয়ে থাকে তাহলে আদালতে তা জমা দিতে হবে।

শেষ শর্ত হলো অনুমতি ছাড়া ভারত ছাড়তে পারবেন না অভিযুক্তরা।

জানুয়ারি মাসের নয় তারিখে এই মামলার পরবর্তী তারিখ পড়েছে।

ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানিয়েছেন সেদিন পিকে হালদারসহ বাকি অভিযুক্তদের সশরীরে হাজিরা দিতে হবে।

মি. হালদারের পক্ষে সওয়াল করা অন্যতম আইনজীবী বিশ্বজিত মান্না বলছেন, "ওইদিন থেকেই বিচারের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। সেদিন শিডিউল ঠিক করে দেবেন বিচারপতি।"

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

ঢাকার একটি ব্যাংক ও অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পিকে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পলাতক ছিলেন।

মি. হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠার পর তিনি পালিয়ে যান।

ওই চার্জশিটে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে কানাডায় এক কোটি সতের লাখ কানাডিয়ান ডলার পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছিলো।

এর আগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

সেই বছর ডিসেম্বরে তাকে ধরার জন্য পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। বিবিসি বাংলা


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাজস্থানে ৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি ৭০০ ফুট গর্তে আটকে থাকা শিশু
বিমান হামলায় গাজায় একসঙ্গে ৫ সাংবাদিককে হত্যা
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরায়েলের
মোজাম্বিকে কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় নিহত ৩৩, দেড় হাজার বন্দির পলায়ন
ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার
আরও

আরও পড়ুন

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি পরিকল্পিত নাশকতা: ইসলামী আইনজীবী পরিষদ

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

গাজীপুরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে আনতে থানায় বিএনপি নেতাদের ভিড়

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

মাদ্রাসার ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

জকিগঞ্জে প্রাক্সিসের ৭ দিনব্যাপী ইংলিশ স্পিকিং চ্যালেঞ্জ কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী

লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার

লামায় ১৭টি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসতঘর পুড়ে ছাই হওয়ার ঘটনায় ৪জন গ্রেপ্তার

বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু

বিজয় দিবস টেনিস শুক্রবার শুরু

আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ

আশুলিয়ায় ভাড়াটিয়া তাড়িয়ে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ

আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।

আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে নাকে খত দেওয়ার ঘটনায় মামলা

শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

শরীয়তপুরে শ্রমিক দলের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল

হেঁটে টেকনাফ গেলেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাসেদুল

বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!

বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে সম্পাদিত গোপন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ!

বাগেরহাটে  জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

বাগেরহাটে  জেলা একীভূত চক্ষু সেবা কর্মসূচির এডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত

সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

সাতক্ষীরায় বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস

অল্পতেই শেষ পাকিস্তানের ইনিংস

খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর

খেপুপাড়া সরকারী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম পুনর্মিলনী ২৮ ডিসেম্বর

হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী

হামলা-নাশকতা প্রতিরোধে কাজ করছে সেনাবাহিনী

তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

তাবলিগ জামাতের দু'পক্ষকেই বিশেষ নির্দেশনা দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল

পেকুয়ায় আগামীকাল বৃহত্তর ঐতিহাসিক তাফসির মাহফিল

‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’

‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেনাবাহিনী দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করুন’